অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন
আমাদের প্রায় অনেকেরই জাতীয় পরিচয় পত্রের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভুল থাকে। কারো নামে ভুল, কারো বাবা-মার নামে অথবা বিভিন্ন পার্সোনাল ইনফর্মেশন এর মধ্যে ভুল থাকে। আপনি চাইলে অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন এই ভুলগুলো অনলাইনের মাধ্যমে অথবা নির্বাচন কমিশন অফিসের মাধ্যমে খুব সহজেই সংশোধন করে নিতে পারবেন।
আপনি জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডের ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন করলে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে আপনার আইডি কার্ড সংশোধন হয়ে যাবে।
You also may like:
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই 19860 915428117351
জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডে ভুল কেন হয়?
ভুল টাইপিং বা ভুল ডাটা এন্ট্রি, ব্যক্তির ভুল তথ্য প্রদান করা ইত্যাদির মত সমস্যার কারণে জাতীয় পরিচয় পত্রের মধ্যে বিভিন্ন সময় ভুল তথ্য চলে আসে। পরবর্তীতে জাতীয় পরিচয় পত্রটি ব্যবহার করতে গেলে এই ভুল আমাদের চোখে পড়ে। যার ফলে আমরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হই।
গুগল নিউজ এ ফলো করুন Click here Follow
জাতীয় পরিচয় পত্রের ভুল সংশোধনের জন্য কি কি কাগজপত্রের লাগে?
জাতীয় পরিচয় পত্রের ভুল সংশোধনের জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হোল |
নাম সংশোধন
আপনি যদি আপনার নিজের নামের কোন সংশোধন করতে চান তাহলে এইচএসসি বা এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। তবে জাতীয় পরিচয় পত্রের মধ্যে যদি আপনার শিক্ষার যোগ্যতা এর থেকে কম থাকে তাহলে এই ডকুমেন্টটি না দিলেও চলবে।
এছাড়া অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও কাবিননামার কপি লাগতে পারে।
পিতা ও মাতার নাম সংশোধন
পিতা ও মাতার নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে তাদের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয় পত্র, তারা যদি চাকরিজীবী হয় তাহলে সেখানকার কোন একটি প্রত্যয়ন পত্র, আপনি আপনার পিতামাতার কততম সন্তান সেটার প্রমাণপত্র চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদান করতে হবে।
জন্ম তারিখ সংশোধন
জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্ম তারিখ সংশোধন করার জন্য অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের মধ্যে যে জন্ম নিবন্ধনটি যুক্ত করা আছে সে জন্ম নিবন্ধনের একটি কপি প্রদান করতে হবে। আপনার জন্ম নিবন্ধনটি যদি অনলাইন করা না থাকে তাহলে অবশ্যই আগে আপনার জন্ম নিবন্ধনকে অনলাইন করবেন তারপরে সেই জন্ম নিবন্ধনটি আবেদনের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে।
এছাড়া জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স, এইচএসসি বা এসএসসি পরীক্ষার সনদ, পাসপোর্ট ইত্যাদির মত ডকুমেন্ট লাগবে।
You also may like:
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন ফি কত?
- জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যগুলো সংশোধন করতে ২৩০ টাকা ফি প্রদান করতে হয়।
- জাতীয় পরিচয় পত্রের অন্যান্য তথ্যগুলো (যেগুলো জাতীয় পরিচয়পত্রের মধ্যে থাকে না) সংশোধন করতে ১১৫ টাকা খরচ হয়।
- উভয় তথ্য সংশোধন করতে ৩৪৫ টাকা ফি প্রদান করতে হয়।
- জাতীয় পরিচয় পত্র হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে রি-ইস্যুর আবেদনে ৩৫৪ টাকা ফি প্রদান করতে হয়। আপনি যদি জরুরী ক্ষেত্রে রি-ইস্যুর আবেদন করেন তাহলে আপনাকে ৫৭৫ টাকা ফি প্রদান করতে হবে।
(জাতীয় পরিচয় পত্রের সংশোধন কি সরকার কর্তৃক পরিবর্তন হতে পারে)
অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন
আপনি চাইলে অনলাইনে অথবা নির্বাচন কমিশন অফিসের মাধ্যমে মাত্র অল্প কিছু ধাপ অতিক্রম করেই আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধন করে নিতে পারবেন।
অনলাইনের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধন এর নিয়ম:
- প্রথমে আপনারা জাতীয় পরিচয় পত্রের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (https://services.nidw.gov.bd/) গিয়ে আপনার ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।
- সেখানে লগইন করার পরে “বিস্তারিত প্রোফাইল” অপশন এ ক্লিক করুন। ক্লিক করার সাথে সাথে আপনি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের পার্সোনাল ইনফরমেশন গুলো দেখতে পাবেন।
- তারপর উপর দিকে “এডিট” অপশনে ক্লিক করলে আপনি জাতীয় পরিচয় পত্রের সকল ইনফরমেশন গুলো সংশোধনের সুযোগ পাবেন। আপনি আপনার যে তথ্যটি সংশোধন করতে চান সেটার পাশের বক্সে টিক চিহ্ন দিলে আপনি সেই তথ্যটি সংশোধন করতে পারবেন।
- তথ্যগুলো সঠিকভাবে লেখার পরে উপরে “পরবর্তী” অপশনে ক্লিক করলে আপনি যে তথ্যগুলো সংশোধন করেছেন সেগুলো প্রিভিউ দেখাবে। আপনার সকল তথ্য যদি সঠিক থাকে তাহলে আবার পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন।
- এখন আপনার তথ্য সংশোধন অনুযায়ী ওয়েবসাইট থেকে আপনাকে যত টাকা পেমেন্ট করতে বলবে ওই টাকাটা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে (যেমন: বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি) প্রদান করুন।
- যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং এ পে বিল অপশনে গিয়ে nid লিখে সার্চ করলে নির্বাচন কমিশন অফিসের অফিসিয়াল বিল পে অপশন পেয়ে যাবেন। সেখানে যাওয়ার পরে আপনি যে তথ্যটি সংশোধন করেছেন সেই তথ্যটি নির্বাচন করুন। তারপর আপনার তথ্য অনুযায়ী বিকাশের মধ্যে অটোমেটিক আপনাকে যত টাকা পে করতে হবে সেটা শো করবে। তারপর আপনারা সেই টাকাটা পেমেন্ট করে দিন।
- পেমেন্ট করার সাথে সাথেই আপনি ওয়েবসাইটে গিয়ে উপরে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন। আপনি চাইলে পরবর্তীতে ও এ কাজ করতে পারবেন। তারপর আপনার সংশোধন অনুযায়ী কাগজপত্রের স্ক্যান কপি ওয়েব সাইটে আপলোড করুন।
- আপনার সকল কাজ যদি সম্পূর্ণ হয় তাহলে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করলে আপনি যে বিষয়গুলো সংশোধন করেছেন এবং যে ডকুমেন্টগুলোর স্ক্যান কপি আপলোড করেছেন সেগুলো রিভিউ দেখাবে।
- আপনার সকল তথ্য যদি সঠিক থাকে তাহলে সাবমিট অপশনে ক্লিক করলেই আপনাকে একটি পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করতে বলবে সেটি ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করে রাখুন।
- আপনি যদি কোন কারণে সে পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করতে না পারেন তাহলে পরবর্তীতে আপনি আপনার প্রোফাইলের উপরে ডাউনলোড অপশন পেয়ে যাবেন।
এইভাবে সংশোধনের আবেদন করার ১৫ থেকে ২০ দিন এর মধ্যে আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধনের একটি এসএমএস আপনার মোবাইল নাম্বারে পেয়ে যাবেন। মনে রাখবেন এসএমএস পাওয়ার সাথে সাথেই আপনার সংশোধন তথ্যটি অনলাইনে শো করবে না। এসএমএস পাওয়ার ২৪ ঘন্টা পর আপনার সংশোধিত তথ্যটি অনলাইনে শো করবে।
নির্বাচন কমিশন অফিসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন
নির্বাচন কমিশন অফিসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য আপনাকে আপনার নিকষ্ট জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে যেতে হবে। সেখানে যাওয়ার পরে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন ফর্ম সংগ্রহ করে সেটা পূরণ করুন। আপনি নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বললে তারা আপনাকে ফরমটি প্রদান করবে।
সেটা পূরণ করার সময় অবশ্যই কোন কাটা ছেঁড়া করবেন না। দরকার হলে অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে অবশ্যই ফরমটি পূরণ করাবেন। ফরম পূরণ করার সময় কোন ভুল করা যাবে না। যদি আপনি ফরমের মধ্যে কোন ধরনের ভুল করেন তাহলে সেই ভুলটি আবার জাতীয় পরিচয় পত্রের মধ্যে চলে আসবে। এছাড়া আপনার সংশোধন অনুযায়ী আপনি যে ডকুমেন্টগুলো প্রদান করবেন সেগুলো অবশ্যই সঠিক হতে হবে।
আপনার ডকুমেন্ট এর মধ্যে যদি কোন ঝামেলা থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশন থেকে আপনার সংশোধন আবেদনটি বাতিল করে দেওয়া হবে। এছাড়া আপনি যদি সংশোধনের আবেদন করার পরে মনে করেন যে আপনার এই সংশোধন প্রয়োজন নেই, তাহলে আপনি সরাসরি নির্বাচন কমিশন বরাবর একটি দরখাস্ত লিখে সেটা আপনার জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দিলে তারা আপনার সংশোধনের আবেদনটি বাতিল করে দেবে। এটা অবশ্যই দ্রুততার সাথে করার চেষ্টা করবেন।
আপনাকে যে ফরমটি দিবে সেটা সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সহকারে নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দিন। নির্বাচন কমিশন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্তদের জিজ্ঞেস করলেই তারা কি কি ডকুমেন্ট লাগবে সেগুলো সঠিকভাবে বলে দেবে। অথবা আমি উপরে যে ডকুমেন্ট গুলোর কথা বলছি সেগুলো সংগ্রহ করে সাথে নিয়ে যাবেন।
আজকের পোস্ট নিয়ে শেষ কথা
পরিশেষে, অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন জন্য আবেদন অনলাইনের থেকে না করে সরাসরি নির্বাচন কমিশন অফিসের মাধ্যমে করলে তাড়াতাড়ি ফল পাবেন। আমার নিজের পার্সোনাল অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদেরকে এই পরামর্শ থাকবে।
তবে আপনি যদি কোন কারণে নির্বাচন কমিশন অফিসে যেতে না পারেন তাহলে অনলাইনের মাধ্যমেও আবেদন করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে একটু সময় লাগতে পারে। তবে আপনার তথ্যের সাথে ডকুমেন্টগুলো যদি সঠিক থাকে তাহলে জাতীয় পরিচয়পত্রের মধ্যে আপনার তথ্যগুলো অবশ্যই সংশোধন হবে।
বন্ধুরা আশা করি জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধনের সকল সমস্যার সমাধান আজকের পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের দিতে পেরেছি। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
You also may like: