মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করার নিয়ম
আজকে আমরা বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
প্রতিবছর প্রায় অসংখ্য মানুষ আমাদের দেশ থেকে মালয়েশিয়া যেয়ে থাকে। বিভিন্ন জন বিভিন্ন কাজের জন্য মালয়েশিয়াতে যেতে চাই। তো মালয়েশিয়াতে যাওয়ার জন্য প্রথমে আমাদের যে কাজটি করতে হবে তা হল ভিসা করতে হবে। কিন্তু আমরা অনেকেই মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে অবগত নয়। এজন্য আমরা আজকে ভিসা করার নিয়মাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে এই নিবন্ধন টি সাজিয়েছি। আপনি আমাদের এই নিবন্ধন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ পড়লে মালয়েশিয়া ভিসা সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পারবেন। তো চলুন শুরু করা যাকঃ
মালয়েশিয়া ভিসা কত প্রকার
প্রথমে আমাদের মালয়েশিয়া ভিসার প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে হবে। আপনি কোন কাজের জন্য মালয়েশিয়া যাবেন বা মালয়েশিয়া গিয়ে কি করবেন তার ওপর নির্ণভর করে আপনাকে ভিসা করতে হবে। সাধারণত মালয়েশিয়া ভিসা ৫ ধরণের হয়ে থাকে। নিচে মালয়েশিয়া ভিসার প্রকারভেদ গুলো বিস্তারিত বরননা করা হলোঃ
১. মালয়েশিয়ার টুরিস্ট ভিসা
যারা মালয়েশিয়াতে শুধু বেড়ানোর উদ্দেশে যেতে চান তারা টুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে যেতে পারবেন। এই টুরিস্ট ভিসা করতে সাধারণত পাঁচ থেকে সাত কার্য দিবস সময় লেগে থাকে আবার কখনো এর থেকে কম সময়ও লাগে। এই ভিসার মাধ্যমে আপনি তিন মাস পর্যন্ত মালয়েশিয়াতে বৈধভাবে বেড়াতে পারবেন।
২. মালয়েশিয়ার স্টুডেন্ট ভিসা
যদি পড়াশোনার জন্য মালয়েশিয়া যেতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে স্টুডেন্ট ভিসা করতে হবে। এই ভিসা করতে ২০ থেকে ৩০ দিন সময় লেগে থাকে। এই স্টুডেন্ট ভিসার মাধ্যমে আপনি মালয়েশিয়া গিয়ে পড়াশুনা জন্য থাকতে পারবেন এবং পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরিও করতে পারবেন।
৩. মালয়েশিয়ার কর্মসংস্থান ভিসা
আমাদের দেশ থেকে অনেক শ্রমিক কর্মসংস্থান এর বিভিন্ন দেশে যেয়ে থাকে। এর মধ্যে মালয়েশিয়া অন্যতম। মালয়েশিয়া কর্মসংস্থানের ভিসার জন্য সাধারণত একমাস সময় লেগে থাকে এবং মালয়েশিয়ায় এই ভিসার মেয়াদ থাকবে সর্বনিম্ন দুই এবং সরবচ্চ পাঁচ বছর। বাংলাদেশের শ্রমিকরা মালয়েশিয়াতে এই ভিসার মাধ্যমে দক্ষতা অনুযায়ী যে কোন চাকরি করতে পারবেন।
৪. মালয়েশিয়ার বিজনেস ভিসা
বর্তমানে আমাদের দেশ থেকে অনেকেই ব্যবসার জন্য মালয়েশিয়া যেতে চায়। যারা ব্যবসার ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া যেতে চান তারা বিজনেস ভিসার মাধ্যমে যেতে পারবেন। এই বিজনেস ভিসা করতে সাধারণত দশ কার্য দিবস সময় লেগে থাকে এবং আপনি ব্যবসার জন্য এক থেকে তিন মাস পর্যন্ত মালয়েশিয়াতে বৈধ ভাবে থাকতে পারবেন।
৫. মালয়েশিয়ার মেডিকেল ভিসা
দিন দিন মালয়েশিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নত হচ্ছে। এই জন্য এখন অনেকেই চিকিৎসার জন্য মালয়েশিয়া যেতে চায়। এই ক্ষেত্রে আপনাকে মেডিকেল ভিসা করতে হবে। মেডিকেল ভিসা করতে খুব কম সময় লেগে থাকে মাত্র দুই থেকে তিন দিন। এবং আপনি বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া চিকিৎসার জন্য ৩০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারবেন।
মালয়েশিয়ার ভিসা পেতে কি কি লাগে
আমরা ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া ভিসার প্রকারভেদ জেনে গেছি। এখন মালয়েশিয়ার ভিসা করতে হলে আমাদের কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে যেগুলো আমাদের আগে থেকেই সংগ্রহ করে রেখে দিতে হবে। ভিসার ধরনভেদে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাগজপত্র এর প্রয়োজন হবে। নীচে থেকে কি কি কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে তা জেনে নিনঃ
মালয়েশিয়া মেডিকেল ভিসা
মেডিকেল ভিসার জন্য আমাদের নিজ নাগরিকত্ব সনদ, পাসপোর্ট সাইজের কয়েক কপি রঙ্গিন ছবি, নিজের লিগেল ডিজিটাল পাসপোর্ট, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এর সনদপত্র, নিজ জন্ম নিবন্ধন কপি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদপত্র ও যে ডাক্তার এর কাছে দেখিয়েছেন সে ডাক্তারের রিপোর্ট সংগ্রহ করে রাখতে হবে।
মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা
স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে নিজের লিগেল ডিজিটাল পাসপোর্ট, আপনার পছন্দের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার, পাসপোর্ট সাইজের সদ্য তোলা কয়েকটি রঙ্গিন ছবি, পূর্বের শ্রেণি কলেজ এর সকল মেইন সার্টিফিকেট এবং মার্কশীট গুলো সংগ্রহ করে রাখতে হবে।
মালয়েশিয়া টুরিস্ট ভিসা
টুরিস্ট ভিসার জন্য নিজের দেশী নাগরিকত্ব সনদ, পাসপোর্ট সাইজের কয়েক টি রঙ্গিন ছবি, নিজের লিগেল ডিজিটাল পাসপোর্ট, কোভিড-19 এর টিকা গ্রহণের সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদপত্র সংগ্রহ করে রাখতে হবে।
মালয়েশিয়া কাজের ভিসা
এই ভিসার ক্ষেত্রে উপরিউক্ত কাগজপত্র গুলোর সাথে মেডিকেল ফিটনেসের নথিপত্র সংগ্রহ করে রাখতে হবে।
মালয়েশিয়া বিজনেস ভিসা
এই ভিসার ক্ষেত্রেও একি কাগজপত্র লাগবে শুধু এর সাথে বিজনেস সংক্রান্ত নথি পত্র সংগ্রহ করে রাখতে হবে।
আশা করি মালয়েশিয়া ভিসা করতে কোন মাধ্যমে কি কি কাগজপত্র লাগবে তা জেনে গেছেন এবং সংগ্রহ করে রেখেছেন। এইবার মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করার পালা।
মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করার নিয়ম
মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করার জন্য বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। এবং বর্তমানে অনলাইন এর মাধ্যমে ঘরে বসেই আমরা মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করতে পারব। তো চলুন নীচে থেকে ধাপে ধাপে মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাকঃ
# ধাপ ১ঃ ভিসা বাছাই
প্রথমে আমাদের ভিসার ধরন বাছাই করতে হবে। মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ৫ ধরণের ভিসা রয়েছে এর মধ্যে আপনি যে মাধ্যমে যেতে চান সেটি বাছায় করবেন। এবং বাছায় কৃত ভিসা অনুযায়ী সকল কাগজপত্র আগে থেকেই নিজের কাছে সংগ্রহ করে রাখবেন।
# ধাপ ২ঃ অনলাইন আবেদন
ভিসার ধরন বাছায় করা হয়ে গেলে এইবার অনলাইন এর মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। অনালিনে আবেদনের সময়ে আপনাকে একটি ফরম পুরন করতে হবে। ফরমে মালয়েশিয়া ভিসার নাম সকল তথ্য সঠিকভাবে পুরন করুন। পুরন করা সম্পন্ন হলে একটি কপি নিজের কাছে রেখে দিবেন। আবেদন করার লিংক
#ধাপ ৩ঃ সাক্ষাৎকার করা
ভিসার আবেদন সম্পন্ন হলে পরবর্তী ধাপে ভিসা অফিসে সাক্ষাত করার জন্য সঠিকভাবে সকল কাগজপত্রসহ আবেদন ফরম লিপিবদ্ধ করতে হবে। সাক্ষাৎকার টি কনফার্ম করতে হলে আপনাকে আবশ্যই আপনার সকল প্রকার বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে হবে। এর সাথে আপনার কয়েকটি রঙিন ছবি দিতে হবে। সকল তথ্য সঠিকভাবে সাবমিট সম্পন্ন হলে আপনার মালয়েশিয়া ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক হয়ে যাবে। তারপর আপনার প্রদান করা ইমেইল এ ভিসা অফিস থেকে আপনাকে একটি কনফার্মেশন মেইল পাঠানো হবে।:
#ধাপ ৪ঃ ভিসার ফি প্রদান
মালয়েশিয়া ভিসা করার জন্য আপনি যে ভিসা বাছায় করবেন সে ভিসা অনুযায়ী আপনার প্রদত্ত ফি প্রদান করতে হবে।আবেদন সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে ফি প্রদান করে দিতে হবে।:
#ধাপ ৫ঃ ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ট্র্যাক
আপনাকে ভিসা অফিস থেকে যে কনফার্মেশন মেইল পাঠানো হয়েছে সেই ই-মেইলের মাধ্যমে আপনি আপনার মালয়েশিয়ার ভিসা ট্র্যাক করতে পারবেন। আপনার দেওয়া ইমেইল এ একটি একটি লিঙ্ক দেওয়া থাকবে এই লিংকে প্রবেশ করলে আপনি আপনার ভিসা আবেদনের কাজ কতটুকু সম্পন্ন হয়েছে তা জেনে নিতে পারবেন।:
#ধাপ ৬ঃ ভিসা সংগ্রহ করা
সবশেষে আপনার আসল কাজ হলো ভিসা প্রসেসিং অফিস থেকে আপনার বহুল কাঙ্খিত ভিসা টি সংরহ করা। চিসা সংরহ করার সময়ে অবশ্যই চেক করে নিবেন আপনার প্রয়োজনীয় সকল তথ্য থিক আছে কি না। যদি কোনো ভুল থাকে তাহলে সাথে সাথে সংশোধন করে নিতে পারবেন তা না হলে পরবর্তীতে আপনার সমস্যা হতে পারে৷
আরো পড়ুনঃ কানাডা ভিসা আবেদন ফরম ২০২৩
মালয়েশিয়া ভিসা করতে কত টাকা লাগে
মালয়েশিয়াতে গমন করতে হলে আমাদের অবশ্যই ভিসা করার প্রয়োজন হবে। আমরা উপরে মালয়েশিয়া ভিসার ধরণ সম্পর্কে সকল তথ্য আপনাদের জানিয়েছি। আলাদা আলাদা ভিসার জন্য আলাদা আলাদা খরচ লেগে থাকে।
- মালোয়েশিয়া এন্ট্রি ভিসা করার জন্য খরচ হতে পারে প্রায় INR 1999।
- মালোয়েশিয়া এম্প্লয়মেন্ট ভিসা করার জন্য খরচ হতে পারে, প্রতি বছর প্রায় RM 200।
- মালোয়েশিয়া বিজনেস ভিসা করার জন্য খরচ হতে পারে প্রায় 5720।
- মালোয়েশিয়া মেডিকেল ভিসা করার জন্য আপনার খরচ হতে পারে, প্রায় RS. 5720।
মালয়েশিয়া ভিসার দাম কত
সরকারিভাবে মালয়েশিয়া কাজের ভিসা করতে ৭৮৯০০ টাকার মতো খরচ হবে। এবং কলিং ভিসা প্রসেসিং ফি বাবদ এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। এবং এর সাথে অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ সহ প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকার মত লাগতে পারে।
মালয়েশিয়া ভিজিট ভিসা প্রসেসিং ফি কত
মালয়েশিয়া ভিজিট ভিসা প্রসেসিং ফি ৫৮০০ টাকার মত। তবে বিভিন্ন ধরনের খরচ নিয়ে তিন মাস মালয়েশিয়া ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে মোটামুটি ৫০০০০ থেকে ১০০০০০ লক্ষ টাকার মত খরচ হতে পারে ।
শেষ কথা
তো এই ছিল মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া তে আপনার কোন প্রয়োজনের জন্য যেতে চান তাহলে আমাদের দেওয়া নিয়ম অনুসরণ করলে খুব সহজে মালয়েশিয়া ভিসার আবেদন করতে পারেন। আর আপনার যদি কোন প্রকার প্রশ্ন বা সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন, আমরা সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করব।
[…] মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করার নিয়ম […]