ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম
ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম, ই পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ই পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে আজকের এই নিবন্ধনটি লেখা হয়েছে।
এছাড়া ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে জানতে পারবেন এই আর্টিকেল থেকে।এখন ঘরে বসে আপনি নিজেই দালাল ছাড়া ই পাসপোর্ট করার জন্য অনলাইনে খুব সহজে আবেদন করতে পারবেন যদি আপনার একটি স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটার থাকে।
বর্তমান যুগে প্রত্যেক মানুষেরই দেশ-বিদেশে ভ্রমনের জন্য পাসপোর্ট খুবই জরুরী একটি বিষয়। বিমান, রেল কিংবা নদীপথ যে কোন পথেই আপনি যদি পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া কোনভাবে এক দেশ থেকে অন্য একটি দেশে প্রবেশ করেন তবে তা অনুপ্রবেশ বলেই বিবেচিত করা হবে। আর এর জন্য আপনাকে নানা ধরনের শাস্তি ভোগ করতেও হতে পারে।
তাই প্রত্যেক নাগরিকেরই উচিত আগে থেকেই তার পাসপোর্ট করিয়ে রাখা। কারণ এটি শুধু প্রয়োজনের জন্য নয় বরং প্রত্যেকের নাগরিক অধিকারও এটি। আজকে আমরা ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম এবং এই বিষয়ক সকল তথ্যাবলী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আর আশা করি আপনি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর আমাদের এই নিবন্ধন থেকে পেয়ে যাবেন।
ই-পাসপোর্ট কি?
ই-পাসপোর্ট, ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট হল আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নথি যার পরিচয় বিবরণ যেমন পাসপোর্ট নম্বর, নাম, উপাধি, জাতীয়তা এবং জন্ম তারিখ, সেইসাথে আঙ্গুলের ছাপ, ফটো এবং স্বাক্ষরের মতো ডেটা ধারণকারী একটি ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ। বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট বিশেষ ডিভাইসের মাধ্যমে স্ক্যান করা হয়।
প্রথাগত পাসপোর্টের তুলনায় পাসপোর্ট জালিয়াতির বিরুদ্ধে ই-পাসপোর্টগুলি, কোডগুলির সাথে একত্রে অনেক বেশি কার্যকর। ই-পাসপোর্ট, একটি নতুন বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট যা ঐতিহ্যগত পাসপোর্টে উপলব্ধ সমস্ত তথ্য সম্বলিত, পাসপোর্ট চেকপয়েন্টে কাজের চাপ কমানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
পাসপোর্টে কত প্রকার
যুগে যুগে পাসপোর্টের নানা ধরনের আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু মূল জিনিসটা একই থেকে গেছে। পাসপোর্ট মূলত একটি ছোট আকারের বই যাতে আপনার ও আপনার দেশের যাবতীয় তথ্য এবং একইসাথে আপনার বিদেশ ভ্রমণের অনুমতির তথ্যাবলী উল্লেখ করা থাকে। পাসপোর্ট সাধারণত তিন প্রকারঃ
- হাতে লেখা পাসপোর্ট
- তথা মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট বা (MRP)
- ই-পাসপোর্ট
ই-পাসপোর্টের সুবিধা
ই-পাসপোর্ট যেহেতু সর্বাধুনিক তাই পুরনো পাসপোর্টের তুলনায় এর সুবিধাগুলোও অনেক গুন বেশি। ই-পাসপোর্টের ব্যবহারকারীরা সাধারণত সবচেয়ে বেশি যেই সুবিধাটা ভোগ করবেন সেটি হলো কম সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেশন পার হওয়া। আমরা অনেকেই জানি, ইমিগ্রেশন পার হওয়াতে আমাদের একটু বেশিই সময় লেগে থাকে। যা দীর্ঘ যাত্রার পরে আমাদের কাছে এক ধরনের অসহ্য লাগে। আর সে সমস্যা থেকে অনেকটাই সমাধান পাওয়া যাই এই ই-পাসপোর্টের সাহায্যে। যেহেতু এর মাইক্রোচিপেই পাসপোর্টধারীর সকল তথ্য দেওয়া থাকে তাই ই-পাসপোর্টধারীদের জন্য বিশেষ ই-গেটের সাহায্যে খুব সহজেই এবং খুব দ্রুত ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। ই-গেটে শুধু পাসপোর্টটি রাখলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সকল তথ্য দ্রুত যাচাই হয়ে যাবে।
অতঃপর শুধু মাত্র পাসপোর্টধারীর হাতের আঙুলের বায়োমেট্রিক স্ক্যান সম্পন্ন হলেই ইমিগ্রেশনের ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে। যার ফলে একজন যাত্রীর অনেকটাই সময় বেচে যাবে। তবে শুধু দ্রুততার মাধ্যমে ইমিগ্রেশন পার করাটাই নয় বরং এই ই-পাসপোর্টের মূল লক্ষ্য হলো নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমাদের দেশে অনেকসময় একজনের পাসপোর্ট আরেকজন ব্যবহার করে নানা জালিয়াতি করা হয়ে থাকে, যার ফলে নানা ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই ই-পাসপোর্টের সাহায্যে সকল বেআইনী কাজ খুব সহজেই এড়ানো সম্ভব হবে।
ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
ই পাসপোর্ট অনলাইনে আবেদন করার জন্য কোন কাগজপত্র আপলোড এর প্রয়োজন হয় না তবে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই করতে কিছু কাগজপত্র সাধারণত চেয়ে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হচ্ছে আবেদনকারীর মূল জাতীয় পরিচয় পত্র, ই পাসপোর্ট আবেদনের অনলাইন কপি এবং নাগরিক সনদ। উপরোক্ত উল্লেখিত কাগজপত্র ছাড়াও আরো কিছু কাগজপত্র এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। ই পাসপোর্ট করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিচে প্রদান করা হলোঃ
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র
- আবেদন এর সামারী
- ই পাসপোর্ট এর আবেদন কপি
- ইউটিলিটি বিলের কপি (গ্যাস অথবা বিদ্যুৎ)
- পিতা-মাতার NID কার্ডের কপি (শিশুদের ক্ষেত্রে আবশ্যিক)
- নিজের নাগরিক সনদ
- পেশাজীবীর প্রমাণপত্র
নতুন পাসপোর্ট এর আবেদন করতে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন হয় আশাকরি তা আপনি ইতোমধ্যে সংগ্রহ করে রেখেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে এখন আমরা ই পাসপোর্ট অনলাইনে আবেদন করার জন্য প্রস্তুত। তাহলে আর দেরি কিসের চলুন নিচে থেকে ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম যেনে নিই।
ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম
ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। সেজন্য প্রথমেই আপনাকে ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার জন্য সরকারি ওয়েবসাইটে যেতে হবে। ওয়েবসাইটে গেলেই উপরে ডান দিকে ইংরেজি ও বাংলা দুই ধরনের ভাষার মধ্যে যে কোন একটি নির্ধারণ করতে পারবেন।
আপনি যেই ভাষায় আবেদন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন সেই ভাষাটি নির্বাচন করুন। অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন করার বিষয়টি সহজ করার লক্ষে আমরা আবেদন প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপে বিভক্ত করেছি। ধাপগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি নিজে নিজে ঘরে বসে অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন করতে সক্ষম হবেন।
ধাপ ১: পাসপোর্ট এর জন্য আঞ্চলিক অফিস ও থানা নির্বাচন করুন
প্রথমে অফিসিয়াল সাইট ভিজিট করুন। অথবা এখানে ক্লিক করুন। সাইটে প্রবেশ করলে আপনি নিচের ছবির মত একটি পেইজ দেখবেন।
এখান থেকে Directly to online Application লেখা এই অপশনে ক্লিক করতে হবে। তারপর নিচের ছবির মত পেইজ দেখতে পারবেন। এখানে আপনার বর্তমান জেলা ও থানার নাম সিলেক্ট করতে হবে।
ধাপ ২: ইমেইল ভেরিফিকেশন করুন
এই ধাপে আপনাকে একটি সক্রিয় ইমেইল অ্যাড্রেস দিতে বলা হবে। এরপরে আপনার প্রদান করা ইমেইল এড্রেসে পাসপোর্ট ওয়েবসাইট থেকে মেইলের মাধ্যমে একটি ভেরিফিকেশন লিংক পাঠানো হবে। উক্ত লিংকে ক্লিক করে ইমেইল ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে হবে।
ধাপ ৩ঃ পাসপোর্ট এর ধরন বাছাই
সাধারণত আমাদের দেশে দুই ধরণের পাসপোর্ট এর প্রচলিত দেখতে পাই। ধরণ দুই টি হলোঃ
- Ordinary Passport
- Official Passport
সাধারণত নাগরিক হিসেবে অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যয় অর্ডিনারি (Ordinary Passport)টাইপ বাছাই করতে হবে।
ধাপ ৪: ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ
মূলত নতুন পাসপোর্ট আবেদন করার মূল কাজ শুরু হয় এই ধাপ থেকে। এখানে আপনার সকল ব্যক্তিগত তথ্য গুলো ইংরেজিতে সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। ইমেইল ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ার পর পুনরায় পাসপোর্ট ওয়েবসাইটে লগইন করুন এবং তারপর আপনার নাম এবং জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো প্রদান করে সেভ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৫ঃ ঠিকানা নির্বাচন ও ই পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন
ই পাসপোর্ট আবেদন সম্পন্ন করতে হলে অবশ্যয় আপনাকে পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তির বর্তমান ঠিকানা সঠিক ভাবে প্রদান করতে হবে। ঠিকানা নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিচের ধাপ গুলো লক্ষ্য করুনঃ
- নিজ জেলার নাম
- নিজ থানার নাম
- বসবাসরত গ্রামের নাম
- রোড নাম্বার (যদি থাকে)
- পোস্ট অফিস নাম
- পোস্ট কোড নাম্বার
প্রত্যেকটি তথ্য যচাই বাছাই করে নির্ভুল ভাবে দেয়ার চেষ্টা করবেন। বিশেষ করে ঠিকানার বিষয়টি একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রদান করবেন। কেননা আপনার দেয়া এই ঠিকানাতেই পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
ধাপ ৬ঃ আইডি ডকুমেন্টস
এই ধাপে আপনার আগের কোন প্রকার পাসপোর্ট আছে কিনা বা অন্য কোন দেশের পাসপোর্ট আছে কিনা সে বিষয় এ জানতে চাওয়া হবে। এবং জন্ম নিবন্ধন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সকল প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ভালোভাবে প্রদান করতে হবে।
ধাপ ৭ঃ পিতা মাতার তথ্য পূরণ
উপরের ধাপ গুলো সম্পন্ন হলে এখন আপনাকে আপনার পিতা মাতার তথ্য প্রদান করতে বলা হবে। ই পাসপোর্টের Parental information লিখিত জায়গায় পিতা-মাতার নাম, তাদের পেশা, তাদের জাতীয়তা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার দিয়ে ফরমটি সাবধানতার সাথে পূরণ করতে হবে।
ধাপ ৮ঃ পাসপোর্টের পৃষ্ঠা ও মেয়াদ যাচাই
পাসপোর্টের ধরনে আপনি আপনার পাসপোর্টের পৃষ্ঠা ও মেয়াদ নিজের ইচ্ছা মতো বাছাই করতে পারেন। আপনার বিদেশ ভ্রমণ ও প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠা আনুসারে ৪৮ পৃষ্ঠা কিংবা ৬৪ পৃষ্ঠার মধ্যে যে কোন একটি বাছাই করুন। পৃষ্ঠা সংখ্যা নির্ধারণ হয়ে গেলে পরবর্তীতে ই-পাসপোর্টের মেয়াদ নির্ধারণ করতে হবে। ৫ বছর কিংবা ১০ বছর মেয়াদি এই ২ টার মধ্যে যে কোন একটি পাসপোর্ট করা যায়। তবে মনে রাখা জরুরী যে পৃষ্ঠার সংখ্যা ও মেয়াদের উপর ভিত্তি করে ই পাসপোর্ট ফি নির্ধারিত করা হবে।
ধাপ ৯ঃ ডেলিভারির ধরন
পাসপোর্ট ডেলিভারি সাধারণত ৩ ধরনের হয়ে থাকে। রেগুলার, এক্সপ্রেস এবং সুপার এক্সপ্রেস এই ৩ টি হলো পাসপোর্ট ডেলিভারির ধরন। জরুরি বা ইমেরজেন্সি হলে এক্সপ্রেস ও সাধারণ হলে রেগুলার বাছাই করতে হবে।
ই পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগবে
আবেদন সাবমিট করার আগে আবেদন সামারি থেক আপনার তথ্য গুলো পুনরায় ভালোভাবে যাচাই করে নিন। সবকিছু ঠিক থাকলে পাসপোর্ট ফি প্রদান করার জন্য পাসপোর্ট ফি পেজে চলে আসবেন। এবার আবেদন সামারি পেইজের প্রিন্ট কপি এবং আপনার এনআইডি নিয়ে ব্যাংকে যেতে হবে। ব্যাংকে গিয়ে আপনার পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করতে হবে। ফি পরিশোধের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট আবেদন সামারি অনুসারে চালানের মাধ্যমে আপনার পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করতে হবে। আমাদের দেশ এ ই পাসপোর্ট করতে সর্বনিম্ন ৪০২৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৩,৮০০ টাকা লাগবে। তবে পাসপোর্ট এর পৃষ্ঠা সংখ্যা, মেয়াদ ও ডেলিভারীর ধরণ অনুযায়ী ফি কিছু কম বা বেশি হতে পারে।
শেষ কথা
তো এই ছিল ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আশা করি আপনারা আপনাদের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য পেয়ে গেছেন। তবুও যদি আপনাদের কোন প্রকার সমস্যা বা প্রশ্ন থেকে থাকে অবশ্যয় আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
[…] ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম […]
[…] অনলাইনের মাধ্যমেই ই পাসপোর্টের আবেদন করা যায়। ই পাসপোর্টের আবেদন করার পর […]